জেলা প্রতিনিধি বগুড়া : বগুড়ায় ছুরিকাঘাতে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় ছয় দফা দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেছে শিক্ষার্থীরা।
জানাগেছে, শজিমেক ও পুলিশ প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার পর সন্ধ্যা পৌণে ৬টার দিকে তারা অবরোধ তুলে নেন। এর আগে রোববার ( ৪ ডিসেম্বর) বিকেল পৌণে ৪ টার দিকে শজিমেক হাসপাতালের ২ নম্বর গেটের ঢাকা -বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় মহাসড়কের দু’পাশে প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানযটের সৃষ্টি হয়। রোববার বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এসময় হাসপাতালের ১ নম্বর গেটে দিয়ে পুলিশি বাঁধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা সড়কে নেবে আসেন। এসময় শিক্ষার্থীরা তাদের ছয় দফা দাবি গণমাধ্যমকে জানায়। শজিমেকের ফাইলান ইয়ারের শিক্ষার্থী অর্ঘ রায় এ ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে হাসপাতালের ২ নম্বর গেইট সংলগ্ন সব অনিবন্ধিত দোকান উৎখাত ও দোকানীদের ট্রেড লাইসেন্স চেক করাসহ পুলিশ ভেরিভিকেশন সম্পন্ন করার পর এখানে ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হবে।
আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন নতুন রাস্তার মোড়ে, লেডিস হোস্টেলের সামনে, ফিরিঙ্গির মোড়, ভার্সেটাইল মোড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে হবে।
শজিমেক ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ও ক্যাম্পাসের কলেজ এরিয়ার এন্ট্রি পয়েন্ট গুলোতে ২৪ ঘণ্টা আনসার মোতায়েন করতে হবে।
আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে দুই নম্বর গেট সংলগ্ন নতুন রাস্তার মোড়ে সার্বক্ষণিক পুলিশি টহলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে কলেজ ক্যাম্পাসের প্রত্যেক অন্ধকার পয়েন্ট আলোকিত করতে হবে।
এবং দ্রুততম সময়ে হত্যাকারী শাকিলের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এসময় শিক্ষার্থীরা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে দাবি পূরণ না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।
পরে বিকেল ৫ টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে বগুড়া শজিমেকের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাঃ রেজাউল আলম জুয়েল ও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শরাফত ইসলাম আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের একটি দল নিয়ে আলোচনায় বসেন। শজিমেকের অধ্যক্ষর কার্যালয়ে প্রায় এক ঘণ্টার আলোচনা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে আসেন।
এসময় শজিমেকের অধ্যক্ষ ও পুলিশ প্রশাসন তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় তারা মহাসড়কে অবরোধ তুলে নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন।
ক্যাম্পাসে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমকে জানায়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কলেজ ও পুলিশ প্রশাসন তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। এজন্য তারা রোববারের সব আন্দোলনের কর্মসূচী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে আবারও সোমবার বিকেল থেকে আন্দোলন শুরুর কথা জানান শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন শৈশব রায়। তিনি শজিমেকের ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থী। তিনি জানান, ‘কলেজ ক্যাম্পাসের আশেপাশে ও ভেতরে বরাবরই শিক্ষার্থীরা নানাভাবে হেনস্তার শিকার হয়ে থাকে। ফাহিম ভাইয়ের মৃত্যু কোনভাবেই কাম্য নয়। আমরা জড়িতদের ফাঁসিসহ আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত চাই। ‘
আন্দোলনরত আরেক শিক্ষার্থী ফাইনাল ইয়ারের অর্ণব আকন্দ জানান, প্রতিবারই প্রশাসন আশ্বাস দেয়। তবে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়না। ফাহিম ভাইয়ের খুনিদের ফাঁসিসহ ছয় দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। ‘
শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে, আনোয়ারুল আজিম ফাহাদ ও দীপা রায়সহ কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
বগুড়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শরাফত ইসলাম জানান, ইতিমধ্যে সব আসামী গ্রেপ্তার হয়েছে। তারা জেলা কারাগারে আছেন। আইনগতভাবে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের সব দাবি বাস্তবায়নে পুলিশ কাজ করবে।
ঝাল-মুড়ি খাওয়াকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে আহত বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থী (২৫ তম ব্যাচ) মেহেরাজ হোসেন ফাহিম রোববার সকালে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
এরআগে গত ২৩ নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যার দিকে ইন্টার্ন চিকিৎসক ফাহিম বন্ধুদের সাথে শজিমেক হাসপাতালের ২ নম্বর গেটে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় তারা বাবা-ছেলে ফরিদ ব্যাপারী ও শাকিল হোসেনের দোকানে ঝাল-মুড়ি খেতে যান। সেখানে ঝাল-মুড়ি খাওয়া নিয়ে বাবা-ছেলের সাথে বাকবিতণ্ডতায় জড়িয়ে পড়েন ফাহিম। ওই সময় ক্ষিপ্ত হয়ে শাকিল তার হাতে থাকা পেঁয়াজ কাটার চাকু দিয়ে ফাহিমের পেটে আঘাত করে পালিয়ে যান।
পরে তাকে উদ্ধার করে শজিমেকে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে ফাহিমকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
এ ঘটনায় ওই দিন পুলিশ ফরিদ ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করে। পরে রাতে ছেলে শাকিল ব্যাপারিকেও গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার দু’জনকে আসামি করে পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে ফাহিমের বাবা নুর মোহাম্মদ মামলা দায়ের করেন।